জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের রায়ের দিন ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার রায় আগামী ১৭ নভেম্বর (সোমবার) ঘোষণা করা হবে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ৯ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায়ের দিন ধার্য করেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম ও ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।
মামলার পটভূমি
শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা।
এরপর ১ জুন রাষ্ট্রপক্ষ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে অভিযোগ দায়ের করে। ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-১।
এক পর্যায়ে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি ঘটনার সত্য উদ্ঘাটনে সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষ্য ও প্রমাণ
এই ঐতিহাসিক মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ আবু সাঈদের পিতা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা, ‘আমার দেশ’-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, এনসিপি আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম, এবং বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর (লিখিত সাক্ষ্য)।
অভিযোগের সারসংক্ষেপ
ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে অভিযোগ গঠন করে।
১️, উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্ররোচনা:
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা দেন, যার পরপরই সরকারি বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সহায়তায় নিরস্ত্র জনতার ওপর আক্রমণ চালানো হয়।
২️, হত্যার নির্দেশ:
হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা, যা বাস্তবায়ন করেন কামাল ও মামুন।
৩️, আবু সাঈদ হত্যা:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় অভিযোগ।
৪️, চানখাঁরপুলে গুলি করে হত্যা:
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ।
৫️, আশুলিয়া হত্যাকাণ্ড:
‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছাত্রদের গুলি করে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশের অভিযোগ।
উপসংহার
দেশের ইতিহাসে এটি একটি অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন বিচার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামী ১৭ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বিচারিক অধ্যায় নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে।